রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে অপপ্রচারের অভিযোগে আইসিটি মামলায় কারাগারে গেছেন এক ছাত্রলীগ কর্মী। একই মামলায় পলাতক রয়েছেন ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরও দুই নেতা।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদের পক্ষে তার কম্পিউটার অপারেটর অলিউর রহমান ইমরান গত ৭ মে তিন জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও আসামি রেখে নবীগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।
ওইদিনই গ্রেপ্তার করা হয় ছাত্রলীগ কর্মী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে। অপর দুই আসামি হলেন— হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ রুহেল।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে অস্বচ্ছলদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন এমপি মিলাদ গাজী। বিষয়টি তিনি তার ফেসবুক টাইমলাইনেও প্রচার করেন। সেই অনুযায়ী রাতের বেলা গাড়িতে করে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ভিডিও দেন ফেসবুকে।
এমপির ত্রাণকাজের সমালোচনা করে ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুন তাদের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন।
ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেনের স্ট্যাটাসটি ছিল— ‘ত্রাণের নামে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন, কল করুন খাবার পৌঁছে দিব বাড়িতে, এসব ভাঁওতাবাজি বন্ধ করুন, অসহায় হতদরিদ্রদের নিয়ে আর খেলা করবেন না, দয়া করে এসব বন্ধ করুন। আমার এলাকার বেশ কয়েকজন লোকের অভিযোগ বিগত ২০ দিন পূর্বে কল করেও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি কোনো সহযোগিতা, অসহায় হতদরিদ্রদের আশা দিয়ে কেনো নিরাশ করা হচ্ছে? অসহায়দের এই প্রশ্নের উত্তর আদৌও কেউ দিবেন কি?’
পরে ছাত্রলীগ কর্মী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন— ‘দয়া করে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন, গরিব অসহায় বলে কাউকে এই কঠিন বিপদের সময় দেখবেন না সব হারিয়ে নিরস হতে সময় লাগবে না। মাননীয় এমপি মহোদয় নবীগঞ্জ বাহুবলের বর্তমান এমপি যিনি বিভিন্ন ধরণের ভাঁওতাবাজি করে ফেসবুকে ভাইরাল পোস্ট করে আসছেন তিনি এই করুন করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষকে নিয়ে আর কি নাটক অভিনয় করবেন? ধন্যবাদ সময়ের সাহসী বীর ভাগনা Md Jakir Hussain আমার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ রুহেল এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ফোন করলেই ঘরে পৌঁছে যাবে খাবার, আমার জানা মতে, অনেকেই ফোন দিলো কিন্তু কারো ঘরে, আজও খাবার পৌছে নাই, ব্যাপার কি?’
এই স্ট্যাটাসগুলো ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে এগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় গত ৭ মে সংসদ সদস্যের কম্পিউটার অপারেটর বাদী হয়ে ফেসবুকে প্রচারকারী ওই তিন জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন।
ওইদিনই গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে গ্রেপ্তার এবং পরদিন কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। বাকি দুই আসামি পলাতক রয়েছেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান জানান, ফেসবুকে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র একজন সম্মানী ব্যক্তিকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করা হয়েছে। এই অভিযোগে দায়ের করা মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকি দুই আসামি পলাতক রয়েছেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন, ‘সংসদ সদস্য সম্পর্কে সমালোচনাকারীরা দলের নেতাকর্মী। তাই মামলা না করে নিজে বাড়িতে ডেকে এনে শাসন করতে পারতেন।’ নেতাকর্মীদের অভিভাবক হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা উচিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে এমপি গাজী শাহনওয়াজ মিলাদ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুরু থেকেই অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। মধ্যবিত্তদের সহায়তায় রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’
‘কিন্তু একটি কুচক্রী মহল আমার ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে ফেসবুকে নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই আমাকে মামলায় যেতে হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘যারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ওই মহলটি গত সংসদ নির্বাচনেও নানাভাবে সমস্যা তৈরি করেছিল।’
তিনি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ বিতরণের বাইরেও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য সেফটি চেম্বার প্রদান করেছেন বলেও জানান।